বাড়ির নাম পান্থ নিবাস

পুরাতন বাড়িয়ালা আজকে হঠাৎ আমার আম্মুকে ফোন করে বলতেছে, আপনারা আমার বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে যে শুরু হলো জ্বিন ভূতের উপদ্রব তা কোন মতেই কমতেছে না। কত হুজুর দিয়া বাসাটা বন্ধ করাইলাম কাজই হয় না। এখন শেষ মুহূর্তে আপনাদের কাছেই আবার দারস্থ হইলাম। কি করা যায় বলেন তো।


যেই বাসার কথা বললাম, সেখানে আমাদের পুরো পরিবার প্রায় তিন বছরের মতো ছিলাম। এখানে লোকেশনটা উহ্য রাখছি আপাতত যদিও আমার রিলেটিভ এবং ফ্রেন্ড সার্কেল প্রায় সবাই জানে। বাড়ির নামটা শুধু বলি "পান্থ নিবাস"। বিল্ডিং বাংলো টাইপ অনেকটাই। ছাদের উপর বিশাল পরিসরে ভাড়া বাসাটা। আর বাড়িয়ালা থাকতো দোতলায়। মজবুত গঠনের অনেক পুরাতন বাড়ি। এখন এই উপদ্রব আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বাড়িওয়ালা না থাকায় দুইতলাটাও দীর্ঘদিন যাবৎ ফাঁকা থাকায়। 


যাহোক, তো আমার আম্মু জানতে চাইলো সর্বশেষ কি ঘটনা ঘটলো? বাড়িয়ালা বললো, "এখন যেই ভাড়াটিয়া আছে দুই ছেলে মোটামুটি বড়োই সাথে তাদের বাবা-মা। একদম নতুন উঠলো। এমনিতেই কয়েক মাস পরপর ভাড়াটিয়া পরিবর্তনের মহড়া চলছে। যাওয়ার সময় সবার একটাই আক্ষেপ, এতো সুন্দর বাসা কিন্তু থাকতে গেলে ভুতুড়ে অনেক কর্মকাণ্ড ফেস করতে হয়।"


এই যেমন লাস্ট যা ঘটলো, দুই ভাই বাসায় এক রুমে ছিল, বাবা-মা বাহিরে কোন এক কাজে গেছে। তখন রাত আনুমানিক নয়টা কি দশটা হবে। বড় ভাই ঘুমাচ্ছে খাটে আর ছোট ভাই পড়ার টেবিলে পড়ছে। হঠাৎ ছোট ভাইকে সজোরে গালে চড় বসিয়ে দিলো! কোত্থেকে কে দিলো কোন হদীস নাই। বড় ভাই তো ওর সামনেই খাটে ঘুমাচ্ছে। বেচারা এখন মেন্টালি ট্রমার মধ্যে আছে এই ঘটনার পর থেকে। 


এছাড়াও বাড়িতে হঠাৎ রাতে বিকট শব্দ, রাতে থালা বাসন পড়ে ভেঙে যাওয়া, গভীর রাতে বিড়ালের কিংবা কুকুরের কান্না এসব তো নিত্যদিনের ঘটনা। তবে সব ভাড়াটিয়ারাই একটা কমন ঘটনা ফেস করেছে যেটা রীতিমতো সত্যি বিষ্ময়কর লাগলো। এমনটা সচরাচর শুনা যায় না। যেমন, ভাঁজা পোঁড়া কোন খাবার রান্নাঘরে থাকলে আংশিক বা পুরোটা উধাও হয়ে যায়। কে খেয়েছে কোন হদীস পাওয়া যায় না। প্রথম প্রথম সবাই তাদের ঘরের ছোট কর্তাকে দোষারপ করতো যেমনটা সাধারণ ভাবনায় আসে। পরে টের পায় এটাও আসলে কোন স্বাভাবিক ঘটনা না। কিছুটা হাস্যরসের মনে লাগতেই পারে তারপরও এটা কিন্তু সস্তিকর না মোটেও।


এখন অনেকের প্রশ্ন জাগবে, তাহলে প্রায় তিন বছর আমরা কিভাবে ঐ বাসায় ছিলাম! 

জ্বি, আমার আম্মুর কাছে এজন্যই ফোন দিয়েছিলো বাড়িয়ালা যে, কোন সমাধান করা যায় কিনা। কারণ, আমরা থাকাকালীন কিন্তু কোন ধরনের অভিযোগ করিনি এসব নিয়ে। যদিও আমাদের পূর্বে যারা ছিল কিংবা অনেক আগে থেকেই এই বিল্ডিং এর বহু ভুতুড়ে কাহিনি প্রচলিত ছিল। 


এবার পরবর্তী প্রসংগে ফিরি। আসলে আমরা যখন নতুন উঠি ঐ বাসায়। আমার সর্বপ্রথম ছাদের উপর যত উটকো ময়লা আর জঞ্জাল ছিল সবই সর্বপ্রথম পরিষ্কার করি। আর জ্বিনের উপদ্রব ময়লা বা নাপাক জায়গাতেই সবচেয়ে বেশি হয় এজন্য বিষয়টা আগে ট্যাকেল দেই। তারপরও প্রথম প্রথম আমরা অনেক কিছুই ফেস করেছি। যেমন, আমি একদিন রাতে ছাদের কর্নারে একটা রজনীগন্ধা ফুলের গাছ আছে সেটাতে বিশাল সাপ দেখলাম। দেখে ঘাবড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক কিন্তু তারপরও প্রতিক্রিয়া দেখাইনি যদিও রক্ত হিমশীতল হয়ে গেছে বুঝতে পারছিলাম। কোনমতে রুমে ঢুকে যাই। তো ফাস্ট টাইম এমন ছোট খাটো কান্ড ঘটতোই। 


অন্যদিকে আমার বাসার উপরে আরেকটা ছোট্ট করে টাংকির জন্য ছাদের মতো আছে সেটায় কস্মিনকালেও কেউ রাতে উঠার সাহস করতাম না। রাতে অনেক কিছুই ঘটতো তারপর আস্তে আস্তে কমে যায় সব। আমরা ততোটা মারাত্মক ভাবে নেইনি। 


আমাদের একজন আত্মীয় জ্বিন পালতো। বলতে গেলে জ্বিনের মাধ্যমে কবিরাজি করে এমনটা। তো সেই জ্বিন আবার আত্মিয়ের উপর সোয়ার বা ( ভর ) করে যে কারো সাথে কথা বলে পেশেন্ট বলেন আর যাই বলেন। বলে রাখা ভালো, যে কোন জ্বিনের ক্ষেত্রেই মূলত কারো সাথে কথা বলতে চাইলে কোন মানুষের উপর সোয়ার হয়েই কথা বলে এটা স্বাভাবিক বিষয়। তো মাঝে মাঝেই বেড়াতে গেলে গল্প করতো আমাদের সাথে। একদিন সেই জ্বিন একটা কথা বলেছিলো যে, আপনারা যেই বাসায় থাকেন তার আসপাশের জায়গাগুলো বিপদজনক। কিন্তু আপনারাই নিরাপদে সর্বোচ্চ থাকতে পারতেছেন। জানেন কেন এমনটা সম্ভব হচ্ছে? 


আমরা তখন জিজ্ঞেস করায় সে বললো (ভর করা জ্বিন), "আপনাদের ঘরে প্রতিদিন দুই বেলা কুরআন তেলাওয়াত আর নামাজ অব্যাহতভাবে চালু থাকে এজন্যই। আর এমনটা চলতে থাকলে দুনিয়ায় শত শক্তিশালী জ্বিনও আপনাদের কোন ক্ষতী করতে পারবে না।"


এটা বাস্তব ছিল কারণ, আমাদের ফ্যামিলীর আমরা তিন ভাই সহ বাবা প্লাস মা সবাই আমরা কুরআনে হাফেজ আলহামদুলিল্লাহ। পাশাপাশি আমার বোনও প্রায় অর্ধেকের মতো হাফেজ এজন্য আমাদের বাসায় দেখা যেত প্রায় সময়ই কেউ না কেউ কুরআন তেলাওয়াত করছেই। আর এই পরিবেশের কারণে কিভাবে কিভাবে ঐ বাসায় প্রায় তিনটা বছর কাটিয়ে দিলাম কোন ধরনের তেমন বড় বিপজ্জনক কিছু ফেস করতে হয়নি। ছোট খাটো উপদ্রব কিছুটা ছিল তা থাকাটাই স্বাভাবিক কারণ পুরাতন বাড়ির কারণে। 


তো আমার আম্মু বাড়িয়ালাকে বললো আমাদের তো কোন বাসা বন্ধের প্রয়োজন হয়নি। জানি না কেনই বা এখন আর কেউ স্টে করতে পারছে না স্থায়ী ভাবে। তবে আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে এটুকুই বলতে পারি কুরআনের চেয়ে শক্তিশালী অন্য কিছু তো নিশ্চয়ই নেই এই দুনিয়ায়। আর ধর্মীয় বিষয়গুলো নিয়ে কনসার্ন এমন কেউ যদি আসে তাহলে হয়তো এই বাসায় থাকা সম্ভব হবে। তা না হলে আর তো কোন যুক্তি বা কিছু মাথায় আসছে না। এমন মনোভাবের কেউ থাকলে হয়তো আর কোন কবিরাজের বাড়ি বন্ধ করারও প্রয়োজন পড়বে না। তো এই ছিল পান্থ নিবাসের ঘটনা। ঘটনাটি সম্পূর্ণ সত্য। সতর্কতার জন্য লোকেশন দিতে আমি অপারগ বিধায় কেবল বাড়ির নামটাই দিয়ে রাখলাম।



.

- বাড়ির নাম পান্থ নিবাস।


(এটি একটি সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা)


© Nayem Hasanat 🖋️

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার তারাবি ভাবনা

কুরআন শিক্ষা সমাচার - ১